শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ০১:০৭ পূর্বাহ্ন

সংবাদ শিরোনাম :

এ যেন কোনো প্লাস্টিক গ্রহ!

নিজস্ব প্রতিবেদক : যতদূর চোখ যায় ততদূর কেবল প্লাস্টিকবর্জ্যই নজরে পড়ে। যেন এটা পৃথিবীর ভেতর প্ল্যাস্টিকের একটি ছোট গ্রহ। বর্জ্যের পরিমাণ এত বেড়েছে যে, তা ২০ ফুট উচ্চতায় পৌঁছে গেছে। এইসব প্লাস্টিকজমে আছে মালয়েশিয়ার এক জঙ্গলে। এই বর্জ্য সবার আগে বিশ্বখ্যাত শেফ হিউ ফার্নলে-হোয়াইটিংস্টলের নজরে আসে। বর্জ্যস্তুপটি নিয়ে তিনি বলেন- এটা যেন কোনো ডিস্টোপিয়ান দুঃস্বপ্ন। একটি প্লাস্টিকগ্রহ।

ওই বর্জ্যস্তুপ থেকে প্রতিনিয়ত পানিতে ছড়িয়ে পড়ছে প্ল্যাস্টিকসহ হাজারো ক্ষতিকর উপাদান। দূষিত হচ্ছে পানি। হুমকির মুখে পড়ছে নাব্য ও সামুদ্রিক প্রাণীগুলো। সাধারণত, ‘সিঙ্গেল-ইউজ’ বা একবার ব্যবহার করে ফেলে দেওয়া হয় এমন প্লাস্টিকপণ্যগুলোর বেশিরভাগই ভূমিতে থাকে। তবে ঝড় বা অন্যকোনো উপায়ে পরবর্তীতে তা সমুদ্রেই পৌঁছায়।

যুক্তরাষ্ট্রের পরিবেশ বিষয়ক দাতব্য সংস্থা এনআরডিসি অনুসারে, প্রতি বছর সমুদ্রগুলোতে মিশছে ৮০ মেট্রিক টন সমপরিমাণ সিঙ্গেল-ইউজ প্লাস্টিকবর্জ্য।

হিউ মালয়েশিয়ার জঙ্গলের ওই প্ল্যাস্টিকের স্তুপে টেসকো, এম এন্ড এস ও এসেক্স প্রতিষ্ঠানের পণ্য প্যাকেজিংয়ে ব্যবহৃত হয়েছিল এসব প্ল্যাস্টিক। এছাড়া ব্রেইনট্রি, এসেক্স, রোন্ডা সিনন টাফ ও মিল্টন কেইনেসের তৈরি ব্যাগও পেয়েছেন। এছাড়া লন্ডনের হ্যামারস্মিথ অ্যান্ড ফুলহাম ও কেনসিংটন অ্যান্ড চেলসি কাউন্সিলের রিসাইকেলযোগ্য ব্যাগও রয়েছে। এই ব্যাগগুলো পুনরায় ব্যবহারযোগ্য করতে ফেরত নেওয়া হতো। রিসাইকেলযোগ্য ব্যাগগুলো নিয়ে হিউ জানান, আমরা যখন লন্ডনে এই ব্যাগগুলো রিসাইকেলের জন্য ফেরত দেই, আমরা ভাবি, আমরা ঠিক কাজটি করছি। আমাদের মধ্যে ভাল লাগা তৈরি হয়। অন্তত আগে আমার এমনই লাগতো- এখন আর লাগছে না। আমার লজ্জা লাগছে, অপমানিত বোধ হচ্ছে, রাগ হচ্ছে। আমার মনে হচ্ছে, আমার সঙ্গে মিথ্যা বলা হয়েছে।

বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, ২০২৫ সালের মধ্যে সমুদ্রের প্রতি ফুটে অন্তত ১০টি করে প্লাস্টিকব্যাগ পাওয়া যাবে। যুক্তরাজ্য সরকারের এনভায়রনমেন্ট এজেন্সি (ইএ) রিসাইকেল প্রক্রিয়ায় বাধা সৃষ্টিকারী সংস্থা ও অপরাধীদের বিরুদ্ধে তদন্ত করার জন্য একটি দল গঠন করেছে। এক ইএ মুখপাত্র জানিয়েছে, বিদেশে রিসাইকেলযোগ্য পণ্য রফতানির একটি বৈধ বাণিজ্য রয়েছে। কিন্তু, এ বিষয়ে আইন পরিষ্কার। সকল রফতানি হওয়া বর্জ্য অবশ্যই মেরামত ও রিসাইকলযোগ্য হতে হবে। কোনো পরিস্থিতিতেই এসব পণ্য ফেলে রাখা যাবে না।

এদিকে, যুক্তরাজ্যের ব্রেইনট্রি কাউন্সিল মালয়েশিয়ার স্তুপে তাদের ব্যাগ বিষয়ে বিবিসিকে জানিয়েছে, মালয়েশিয়ার জঙ্গলে পাওয়া যাওয়া প্লাস্টিকবর্জ্যগুলো অন্তত চার বছর পুরনো। তারা বলেছে, আমাদের কিছু রিসাইকেলযোগ্য ব্যাগ পূর্বে বাইরে পাঠানো হয়েছে। কিন্তু সেগুলো একটি লাইসেন্সপ্রাপ্ত ও স্বীকৃত পরিবেশ বিষয়ক সংস্থার মাধ্যমেই পাঠানো হয়েছে। ব্যাগগুলোর প্লাস্টিকব্যবহার করে নতুন পণ্য তৈরি করার কথা ছিল।

ক্যাসল পয়েন্ট কাউন্সিল জানিয়েছে, আমাদের রিসাইকেলযোগ্য পণ্যগুলো দেশের একটি লাইসেন্সপ্রাপ্ত বর্জ্য নি®পত্তি অপারেটরের কাছে পাঠানো হ। এরপর সেগুলো কোথায় যায়, সে বিষয়ে আমরা কিছু জানি না। কেনসিংটন ও চেলসি কাউন্সিলের এক মুখপাত্র এ বিষয়ে মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন। অন্যদিকে হ্যামারস্মিথ ও ফুলহাম জানিয়েছে, তারা বিদেশে কোনো বর্জ্য রফতানি করে না।

এ বিষয়ে বৃটিশ রিটেইল কনসরটিয়ামের স্থিতিশীলতা ও খাদ্য বিষয়ক পরিচালক অ্যান্ড্রিও পাই বলেন, এই ঘটনায় এটা প্রমাণ হয় যে, যুক্তরাজ্যের রিসাইকেল বিষয়ক কাঠামোগুলোর উন্নতি কতটা গুরুত্বপূর্ণ। গ্রাহকদের আত্মবিশ্বাস থাকতে হবে যে, স্থানীয় কাউন্সিলগুলো তাদের পণ্য সঠিকভাবে ব্যবহার করছে ।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন

ওয়েবসাইটের কোন কনটেন্ট অনুমতি ব্যতিত কোথাও প্রকাশ করা সম্পূর্ণ বেআইনি।
Design & Developed BY ThemesBazar.Com